নাসির উদ্দিন, স্টাফ রিপোর্টার, পটুয়াখালী সংবাদদাতাঃপটুয়াখালীর গলাচিপায় যৌতুকের দাবিতে মধ্যযুগীয় কায়দায় গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্বামী মো. নাজমুল হোসেন (২৭) ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নে ভাংরা গ্রামে। জানা যায় গত ৬ বছর আগে উপজেলা আমখোলা ইউনিয়নের ভাংরা গ্রামের মৃত ছত্তার হাওলাদারের ছেলে মো. নাজমুল হোসেনের সঙ্গে পাশর্^বর্তী পূর্ব বাঁশবুনিয়া গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আলী হোসেন হাওলাদারের মেয়ে মোসা. মারুফা বেগম (২৪) এর সাথে বিবাহ হয়। বিয়ের পর হতে মারুফা বেগমের বাবার বাড়ি হতে যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে স্বামী ও তার পরিবার। মারুফা বেগম তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে যৌতুকের জন্য টাকা আনতে অস্বীকার করলে স্বামী নাজমুল হোসেন, শাশুড়ি নাজমা বেগম দলবদ্ধ হয়ে প্রায়ই গৃহবধূ মারুফা বেগমের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। গত (২ মে) বৃহস্পতিবার মারুফা বেগমকে টাকা এনে দিতে পূনরায় চাপ সৃষ্টি করে। মারুফা বেগম টাকা আনতে অস্বীকার করলে স্বামী নাজমুল হোসেন তাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাথারি মারপিট করে শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম করে। নাজমুল হোসেনের মা মারুফার শাশুড়ে পাষন্ড এ নির্যাতনে অংশ নিয়ে মারুফা বেগমের চুলের মুঠি ধরে টানা হেচড়া করে এবং মারধর করে। মারুফার ডাক চিৎকারে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় ফার্মেসী থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। এ বিষয়ে মোসা. মারুফা বেগম বলেন, আমার স্বামী নাজমুল হোসেনের সাথে গত ৬ বছর পূর্বে আমার বিবাহ হয়। সে ব্যবসা করবে বলে জানায়। আর তার জন্য যৌতুকের টাকা দিতে বলে। আমার বাবা মা তাকে নগদ ৫০ হাজার টাকা মটর সাইকেল কেনার জন্য দেয়। বিবাহের সময় স্বর্ণের চেইন ও হাতের আংটি সহ লোপ তোষক এবং অন্যান্য মালামাল দেয়। কিন্তু বিবাহের ১ বছর পার হতে না হতেই সে আমাকে যৌতুকের টাকা এনে দিতে বলে এবং প্রায় সময় আমার স্বামী, শ^াশুড়ী, চাচা শশুর আমাকে মারধর ও নির্যাতন করত। আমি টাকা কোথায় পাব বললে সে তার চাচা ও মায়ের কুপরামর্শে আমাকে মারধর করে। পরবর্তীতে আমার স্বামী আমাকে না জানিয়ে গোপনে যৌতুকের আশায় ২য় বিবাহ করেন। পরে এ বিষয়ে জানতে পেরে আমার স্বামীকে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে আমাকে মারধর করে আমার বাবার বাড়িতে তাড়িয়ে দেয়। এখন সে আমাকে তালাক দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি এর সঠিক বিচার চাই। এ বিষয়ে মারুফার বাবা আলী হোসেন বলেন, নাজমুল প্রায় সময়ই টাকা চাইত। আমি ৫০ হাজার টাকা নগদ দিয়েছিলাম। তারপরও টাকা চাইত। টাকা দিতে না পারায় আমার মেয়েকে মারধর করে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এখন সে আরো ১টি বিবাহ করেছে। সেই স্ত্রীর নাম ময়না বেগম পিতা জব্বার, বাড়ি গোলখালী। ওরা আমার মেয়ের জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই। এ বিষয়ে মারুফার মা রেহেনা বেগম জানান, আমিও একটা মেয়ে। আমার মেয়ের দিকে তাকানো যায় না। সারাদিন শুধু চিন্তা করে আর কান্না করে। নাজমুলকে টাকা পয়সা স্বর্ণের চেইন, আংটি দিয়েও ওর মন গলাতে পারি নাই। ও আমার মেয়েকে রেখে আবার বিবাহ করেছে। আমরা গরিব মানুষ। সমাজের কাছে এর বিচার চাই। আমরা কোন উপায় না পেয়ে লিগ্যাল এইড ব্র্যাকে মামলা করেছি। এ বিষয়ে নাজমুল হোসেনের মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার সত্যতা জানতে নাজমুলের মা নাজমা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার ছেলের নামে মিথ্যা রটানো হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটু মনোমালিন্য হতেই পারে। তবে ২য় বিবাহ করেছে কিনা আমি বলতে পারি না। তবে লোক মুখে শুনেছি যে ও আবার বিবাহ করেছে। এ বিষয়ে আমখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান মনির বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি এবং ঘটনাস্থলে গিয়েছি। নাজমুলের পরিবারের এরকম করা উচিত হয় নাই। গলাচিপা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফেরদৌস আলম খান বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।